নওগাঁর মান্দায় হঠাৎ বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে অন্তত ১০ হাজার বিঘা জমির বোরো ধান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিলমান্দায়। এ বিলে অন্তত ৫ হাজার জমির ধান এখন পানির নিচে। বরেন্দ্র অঞ্চলের খাড়ি দিয়ে নেমে আসা পানিতে কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। এছাড়া ছাতড়া বিলসহ উপজেলার বিভিন্ন মাঠের নিচু এলাকায় একইভাবে তলিয়ে গেছে আরো অন্তত ৫ হাজার বিঘা জমির ধান।
কৃষকদের অভিযোগ, বরেন্দ্র অঞ্চলের ১৮টি খাড়ির সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে বিলমান্দাতে। একটু বৃষ্টি হলেই এসব খাড়ি দিয়ে পানি অনায়াসে চলে আসে মান্দার বিলে। আর এতেই তলিয়ে যায় বিলের বোরো আবাদ। বিলমান্দার ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে শিবনদ। কিন্তু নদটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। নদের বুকেও চাষ হয় বোরো ধানের। এটি খনন করা হলে বৃষ্টির পানি অনায়াসে নেমে যাবে নিচের দিকে। তাহলে একমাত্র ফসল নিয়ে আর দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না তাদের।
জানা গেছে, মান্দার বিলে নিয়ামতপুর উপজেলার দারাজপুর ও বিলজাওন এবং মান্দা উপজেলার পরানপুর, চেরাগপুর, ছুটিপুর, কোঁচড়া, বাদলঘাটা, বিলমান্দা, হলুদঘর, দাওয়াইল, সগুনিয়া, শ্রীকলা, গাগড়া, চাকদহসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের বোরো ধানের চাষ করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে মূহুতেই তাদের সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া ঘোনা, কুরকুচি, বিলহিলনা, বিলউথরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় মাঠে নিচু জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
কসবামান্দা গ্রামের কৃষক মাইনুল শেখ বলেন, এবারে বিলে ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেন। জমিতে এরই মধ্যে সার-কীটনাশক দেওয়ার কাজ শেষ করেছেন। হালচাষ থেকে এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু একদিনের বৃষ্টিতে তার সবশেষ হয়ে গেছে। বাদলঘাটা গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম বলেন, বিলের ৭ বিঘা জমিতে জিরাশাইল জাতের ধান চাষ করেছিলেন। অনেক আশা নিয়ে এবার তিনি মাঠে নামেন। এসব জমিতে এখন প্রচুর পানি। তাদের রোপনকৃত জমির ওপর দিয়ে এখন নৌকা চলছে। কৃষকদের অভিযোগ, নিয়ামতপুর উপজেলার হরিপুর, বেনিপুর, শিশা, দরগাপাড়াসহ এ উপজেলার ১৮টি খাড়ি সংস্কার করে পানিপ্রবাহ বাড়ানো হয়েছে।
এসব খাড়ির সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে বিলমান্দায়। একটু বৃষ্টি হলেই বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি এসব খাড়ি দিয়ে বিলমান্দায় অনায়াসে চলে আসে। তলিয়ে যায় বিলমান্দায় রোপনকৃত ফসল। বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় বন্যার। এবারের বৃষ্টিতে এ বিলে কৃষকদের অন্তত ৫ হাজার বিঘা জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। তাদের দাবি, কালামারা সেতু থেকে চৌবাড়িয়া সেতু পর্যন্ত শিবনদ খনন করা হলে বৃষ্টির পানি অনায়াসে নেমে যাবে। তাহলে বোরো ধান নিয়ে তাদের আর দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, চলতি মৌসুমে হঠাৎ বৃষ্টির কারণে বিলমান্দা ও ছাতড়ার বিলে ১১৫ হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শিবনদ ভরাট হওয়ার কারণে বিলমান্দায় প্রতি বছর এ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। নদটি খনন করা হলে এ সমস্যা আর থাকবে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।